সোমবার থেকেই টাকা তুলতে পারবেন একীভূত পাঁচ ব্যাংকের গ্রাহকরা
একীভূত প্রক্রিয়ায় থাকা পাঁচটি সমস্যাগ্রস্ত ইসলামী ব্যাংকের আমানতকারীরা তাদের টাকা ফেরত পাবেন। আগামী সোমবার থেকেই এসব ব্যাংকের গ্রাহকরা দুই লাখ টাকা পর্যন্ত তুলতে পারবেন। ব্যাংকগুলোর নিজ নিজ শাখা থেকেই এ টাকা তোলা যাবে। আমানত বীমা তহবিল থেকে এ অর্থ দেওয়া হবে। বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
একীভূত প্রক্রিয়ায় থাকা ব্যাংকগুলো হলো—ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক, গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক, সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক, এক্সিম ব্যাংক ও ইউনিয়ন ব্যাংক। ইতোমধ্যে ‘সম্মিলিত ইসলামী ব্যাংক পিএলসি’র চূড়ান্ত অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। নতুন এ ব্যাংক সমস্যাগ্রস্ত পাঁচটি ইসলামী ব্যাংককে অধিগ্রহণ করবে।
গণমাধ্যমে বক্তব্য দেওয়ার অনুমতি না থাকায় নাম প্রকাশ না করে বাংলাদেশ ব্যাংকের এক কর্মকর্তা জানান, একীভূত ব্যাংকের গ্রাহকদের টাকা ফেরত দেওয়া নিয়ে কিছু জটিলতা তৈরি হয়েছিল। তবে এখন টাকা ফেরত দেওয়ার জন্য ব্যাংকগুলো প্রস্তুত। আগামী সোমবার থেকে গ্রাহকরা দুই লাখ টাকা পর্যন্ত তুলতে পারবেন। পাঁচটি ব্যাংকের শাখা থেকেই সংশ্লিষ্ট গ্রাহকরা এ টাকা তুলতে পারবেন। তবে কোনো একজন গ্রাহকের একটি ব্যাংকে একাধিক হিসাব থাকলেও তিনি কেবল একটি হিসাব থেকেই টাকা তুলতে পারবেন। আর কারো যদি পাঁচটি ব্যাংকেই হিসাব থাকে, তাহলে তিনি প্রতিটি ব্যাংক হিসাব থেকেই টাকা তুলতে পারবেন।
কেন্দ্রীয় ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে, যেসব গ্রাহকের হিসাবে দুই লাখ টাকার বেশি রয়েছে, তারা স্কিম ঘোষণার পর ধাপে ধাপে টাকা উত্তোলন করতে পারবেন। এক্ষেত্রে দুই লাখ টাকা তোলার পর তিন মাস পরপর এক লাখ টাকা করে সর্বোচ্চ দুই বছর পর্যন্ত টাকা উত্তোলনের সুযোগ পাবেন। তবে ৬০ বছরের বেশি বয়সি আমানতকারী এবং ক্যানসারে আক্রান্ত গ্রাহকদের ক্ষেত্রে এ বিধান শিথিল রাখা হয়েছে। তারা প্রয়োজন অনুযায়ী যেকোনো পরিমাণ অর্থ উত্তোলন করতে পারবেন। এ স্কিম বাস্তবায়নের মূল উদ্দেশ্য আমানতকারীদের আস্থার সংকট নিরসন এবং ধাপে ধাপে ব্যাংকিং খাতে স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনা।
রাজধানীর সেনা কল্যাণ ভবনে নতুন ব্যাংকটির প্রধান কার্যালয় খোলা হয়েছে। সম্মিলিত ইসলামী ব্যাংকের পরিশোধিত মূলধন নির্ধারণ করা হয়েছে ৩৫ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে সরকার দিয়েছে ২০ হাজার কোটি টাকা এবং আমানত বিমা তহবিল থেকে ১৫ হাজার কোটি টাকা দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। ব্যাংকটির অনুমোদিত মূলধন ধরা হয়েছে ৪০ হাজার কোটি টাকা।
এদিকে, একীভূত হওয়ার প্রক্রিয়ায় থাকা পাঁচটি ইসলামী ব্যাংকের শেয়ার শূন্য করার নির্দেশ দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। ব্যাংকগুলোর প্রকৃত সম্পদের মূল্য ঋণাত্মক হওয়ায় ব্যাংক রেজল্যুশন অধ্যাদেশের আওতায় এ নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যানুযায়ী, পাঁচটি ব্যাংকে বর্তমানে ৭৫ লাখ আমানতকারীর প্রায় এক লাখ ৪২ হাজার কোটি টাকা জমা রয়েছে। বিপরীতে ঋণ রয়েছে এক লাখ ৯৩ হাজার কোটি টাকা, যার বড় অংশ ইতোমধ্যে খেলাপি হয়ে পড়েছে।
জানা গেছে, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকে এক লাখ টাকা পর্যন্ত আমানতকারীর সংখ্যা ২২ লাখ দুই হাজার ১৯ জন। এসব হিসাবে আমানতের পরিমাণ দুই হাজার ৫০২ কোটি টাকা। এক লাখ এক টাকা থেকে দুই লাখ টাকা পর্যন্ত আমানতকারীর সংখ্যা এক লাখ ৪৯ হাজার ৪৫৬ জন। এসব হিসাবে আমানত রয়েছে দুই হাজার ২০১ কোটি টাকা। এক্সিম ব্যাংকে এক লাখ টাকা পর্যন্ত আমানতকারীর সংখ্যা ১২ লাখ ৮১ হাজার ৮৫৮ জন। এসব হিসাবে আমানত রয়েছে এক হাজার ২০২ কোটি টাকা। এক লাখ এক টাকা থেকে দুই লাখ টাকা পর্যন্ত আমানতকারীর সংখ্যা ৮৬ হাজার ১৫৮ জন। এসব হিসাবে আমানতের পরিমাণ এক হাজার ২৫৩ কোটি টাকা।
সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংকে এক লাখ টাকা পর্যন্ত আমানতকারীর সংখ্যা ২৪ লাখ ৩২ হাজার ৪০৮ জন। এসব হিসাবে আমানত রয়েছে এক হাজার ৫১১ কোটি টাকা। আর এক লাখ এক টাকা থেকে দুই লাখ টাকা পর্যন্ত আমানতকারীর সংখ্যা ৮৬ হাজার ৪০৬ জন। এসব হিসাবে আমানতের পরিমাণ দুই হাজার ২৫৫ কোটি টাকা।
এছাড়া ইউনিয়ন ব্যাংকে এক লাখ টাকা পর্যন্ত আমানতকারীর সংখ্যা চার লাখ ৫১ হাজার ৪৬০ জন। এসব হিসাবে আমানতের পরিমাণ ৭০৭ কোটি টাকা। এক লাখ এক টাকা থেকে দুই লাখ টাকা পর্যন্ত আমানতকারীর সংখ্যা ৩৬ হাজার ৯১২ জন। এসব হিসাবে আমানত রয়েছে ৫৫৭ কোটি টাকা। গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংকে এক লাখ টাকা পর্যন্ত আমানতকারীর সংখ্যা চার লাখ ৫৫ হাজার ৪২১ জন। এসব হিসাবে আমানত জমা রয়েছে ৬৩১ কোটি টাকা। এক লাখ এক টাকা থেকে দুই লাখ টাকা পর্যন্ত আমানতকারীর সংখ্যা ২৮ হাজার ৬৪৪ জন। এসব হিসাবে আমানতের পরিমাণ ৪২৮ কোটি টাকা।

আপনার মূল্যবান মতামত দিন: