মসজিদে নববীর মুয়াজ্জিন শেখ ফয়সাল নোমান মারা গেছেন
সৌদি আরবের মদিনা মুনাওয়ারার পবিত্র মসজিদে নববীর মুয়াজ্জিন শেখ ফয়সাল নোমান ইন্তেকাল করেছেন (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। সৌদি আরবের দুই পবিত্র মসজিদভিত্তিক ওয়েবসাইট ‘ইনসাইড দ্য হারামাইন’ এক পোস্টে এই তথ্য জানিয়েছে। তার ইন্তেকালে মুসলিম উম্মাহ এক নিবেদিতপ্রাণ খাদেমকে হারাল।
‘ইনসাইড দ্য হারামাইন’-এর পোস্টে বলা হয়েছে, শেখ ফয়সাল নোমান সোমবার (২২ ডিসেম্বর) সন্ধ্যায় ইন্তেকাল করেন। মঙ্গলবার (২৩ ডিসেম্বর) ফজরের নামাজের পর মসজিদে নববীতে তার জানাজা আদায় করা হয়। পরে মদিনার ঐতিহাসিক জান্নাতুল বাকি কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়।
‘ইনসাইড দ্য হারামাইন’-এর পোস্টে ‘হারামাইন শরিফাইন’ ওয়েবসাইটের এই সংক্রান্ত একটি লিংকও শেয়ার করা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, শেখ ফয়সাল নোমান (রহ.) ১৪২২ হিজরি (২০০১ খ্রিস্টাব্দ) সালে মসজিদে নববীর মুয়াজ্জিন হিসেবে নিযুক্ত হন। সেদিন থেকে তার কণ্ঠস্বর মদিনার দৈনন্দিন জীবনের অংশ হয়ে ওঠে। যে স্থান থেকে একসময় ওহি নাজিল হয়েছিল, সেখান থেকেই তিনি আজান দিয়ে মানুষকে নামাজের দিকে আহ্বান জানাতেন।
শেখ ফয়সাল (রহ.) এমন এক সম্মানিত পরিবারের সন্তান, যারা প্রজন্মের পর প্রজন্ম মসজিদে নববীতে আজান দেয়ার দায়িত্ব পালন করেছেন। তার দাদা ছিলেন এই মসজিদের মুয়াজ্জিন। আর তার বাবা মাত্র ১৪ বছর বয়সে এই মর্যাদাপূর্ণ দায়িত্ব পান— যা নিষ্ঠা, শৃঙ্খলা ও যোগ্যতার বিরল দৃষ্টান্ত। দীর্ঘ কয়েক দশক তিনি নববী মসজিদে আজান দিয়েছেন এবং নব্বই বছরের বেশি বয়সে ইন্তেকাল করেন।
এই পবিত্র বংশধারার মাধ্যমে মসজিদে নববীর মিনার থেকে আজানের ধ্বনি প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে ধ্বনিত হয়েছে। আর এটি উম্মাহর হৃদয়ে গভীরভাবে গেঁথে আছে।
হারামাইন শরিফাইন বলছে, ১৪২২ থেকে ১৪৪৭ হিজরি পর্যন্ত প্রায় ২৫ বছর শেখ ফয়সাল নোমান (রহ.) বিনয়ের সঙ্গে, নিষ্ঠা ও অবিচলতায় এই মহান দায়িত্ব পালন করেছেন। মর্যাদাপূর্ণ উপস্থিতি ও নীরব ইবাদতের জন্য তিনি পরিচিত ছিলেন। কোনও ধরনের স্বীকৃতির প্রত্যাশা ছাড়াই তিনি আজান দিতেন, কারণ তার কণ্ঠস্বর ছিল কেবল আল্লাহর জন্য। গত এক-চতুর্থাংশ শতাব্দী ধরে যারা মসজিদে নববীর আজান শুনেছেন, তারা জেনেও বা না জেনেই তার এই খেদমতের অংশীদার হয়েছেন।
ইন্তেকালের পরদিন মঙ্গলবার ফজরের নামাজের পর মসজিদে নববীতে শেখ ফয়সাল নোমান (রহ.)-এর জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। পরে তাকে জান্নাতুল বাকি কবরস্থানে দাফন করা হয়। এই কবরস্থানে সাহাবি, আলেম ও আল্লাহর নেক বান্দারা শায়িত আছেন। শেখ ফয়সাল নোমান (রহ.)-এর জানাজায় বহু খ্যাতিমান আলেম, শিক্ষক, তালিবুল ইলম এবং মসজিদে নববীর ইমাম ও মুয়াজ্জিনরা অংশ নেন।
হারামাইন শরিফাইন ও মসজিদে নববীর ধর্মবিষয়ক প্রেসিডেন্সির প্রধান শায়খ ড. আবদুর রহমান আস-সুদাইস শেখ ফয়সাল বিন আবদুল মালিক নোমান (রহ.)-এর ইন্তেকালে গভীর শোক প্রকাশ করেন। তিনি নিজের পক্ষ থেকে এবং ইমাম, মুয়াজ্জিন, শিক্ষক ও দপ্তরের সব কর্মীর পক্ষ থেকে সমবেদনা জানান।

আপনার মূল্যবান মতামত দিন: