মালয়েশিয়ার দুই রাজ্যে সাঁড়াশি অভিযানে ৭২ বাংলাদেশি আটক
মালয়েশিয়ার দুই রাজ্যে পরিচালিত সাঁড়াশি অভিযানে ৭২ জন বাংলাদেশিসহ মোট ৪০২ জন অবৈধ প্রবাসীকে আটক করেছে দেশটির ইমিগ্রেশন বিভাগ।
ইমিগ্রেশন সূত্রে জানা যায়, জোহর বাহরুর তেব্রাউ শিল্প এলাকায় একটি কম্পিউটার যন্ত্রাংশ কারখানায় অভিযান চালিয়ে ৩৫৬ জন অবৈধ প্রবাসীকে আটক করা হয়। বুধবার সন্ধ্যা ৭টায় শুরু হওয়া এই অভিযানে পরিকল্পিতভাবে অবৈধ প্রবাসী শ্রমিক নিয়োগের তথ্যের ভিত্তিতে কারখানাটিতে অভিযান পরিচালনা করা হয়।
জোহর ইমিগ্রেশন বিভাগের পরিচালক দাতুক মোহদ রুসদি মোহদ দারুস জানান, সীমান্ত নিয়ন্ত্রণ ও সুরক্ষা সংস্থা (একেপিএস)-এর সহযোগিতায় জেআইএম জোহরের এনফোর্সমেন্ট শাখা অভিযানটি পরিচালনা করে। অভিযানে দেখা যায়, বিপুলসংখ্যক বিদেশি বৈধ ভ্রমণ নথি ও পারমিট ছাড়াই সেখানে কাজ করছিলেন।
তিনি বলেন, অভিযানের সময় কয়েকজন বিদেশি পালানোর চেষ্টা করলেও সব বহির্গমন পথ দ্রুত বন্ধ করে দেওয়ায় তাদের চেষ্টা ব্যর্থ হয়। এ ঘটনায় তদন্তে সহায়তার জন্য কারখানার মানবসম্পদ বিভাগের দুইজন স্থানীয় পুরুষ কর্মীকেও আটক করা হয়েছে।
যাচাইয়ে দেখা যায়, আটকদের মধ্যে ২৯৯ জন মিয়ানমারের নাগরিক, ২৬ জন বাংলাদেশি, ২২ জন ভারতীয়, তিনজন ইন্দোনেশীয়, দুইজন নেপালি এবং একজন করে পাকিস্তান ও ফিলিপাইনের নাগরিক রয়েছেন। তাদের বয়স ১৮ থেকে ৪৬ বছরের মধ্যে।
দাতুক মোহদ রুসদি আরও জানান, কারখানাটিতে অভিবাসন আইন লঙ্ঘনের সুসংগঠিত কর্মকাণ্ডের প্রমাণ পাওয়া গেছে, যার মধ্যে বিদেশি শ্রমিক নিয়োগসংক্রান্ত শর্ত ভঙ্গও অন্তর্ভুক্ত। আটক সবাইকে ইমিগ্রেশন আইন ১৯৫৯/৬৩ ও ইমিগ্রেশন বিধিমালা ১৯৬৩-এর আওতায় সন্দেহভাজন হিসেবে সেতিয়া ট্রপিকা ইমিগ্রেশন ডিপোতে রাখা হয়েছে।
তিনি জোর দিয়ে বলেন, অবৈধ শ্রমিক নিয়োগ করে যারা মুনাফা অর্জন করছে, তাদের বিরুদ্ধে কোনো আপস করা হবে না। জোহরজুড়ে ধারাবাহিক ও সমন্বিত অভিযান চালিয়ে অবৈধ নিয়োগচক্র ভেঙে দেওয়া হবে।
এদিকে নেগেরি সেম্বিলান রাজ্যের নিলাই এলাকায় একটি লৌহ কারখানায় পরিচালিত পৃথক অভিযানে ৪৬ জন অবৈধ প্রবাসীকে আটক করেছে ইমিগ্রেশন বিভাগ। আটক সবাই বাংলাদেশি নাগরিক।
রাজ্য ইমিগ্রেশন পরিচালক কেনিথ তান আই কিয়াং জানান, বৃহস্পতিবার সকাল ৯টা থেকে চার ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে পরিচালিত অভিযানে ২৬ জন জেআইএম কর্মকর্তা অংশ নেন। এ সময় মোট ১১৭ জন যাচাই-বাছাই পরীক্ষা করা হয় এবং তাদের মধ্যে ১৮ থেকে ৪৩ বছর বয়সী ৪৬ জন বাংলাদেশিকে বিভিন্ন অপরাধে আটক করা হয়।
অভিযানে সেরেমবান সিটি কাউন্সিলের ১৯ জন সদস্য এবং স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ১১ জন কর্মকর্তা অংশ নেন। দুপুর ১টা ৩০ মিনিটে অভিযান শেষ হয় এবং কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি বলে জানান তিনি।
কেনিথ তান বলেন, আটকদের বিরুদ্ধে বৈধ পাস ও ভ্রমণ নথি না থাকা, নির্ধারিত সময়ের বেশি অবস্থানসহ বিভিন্ন অপরাধ প্রমাণিত হয়েছে। এসব অপরাধ ইমিগ্রেশন আইন ১৯৫৯/৬৩, পাসপোর্ট আইন ১৯৬৬ এবং ইমিগ্রেশন বিধিমালা ১৯৬৩-এর আওতায় পড়ে।
আটকদের লেংগেং ইমিগ্রেশন ডিপোতে রাখা হয়েছে। একই সঙ্গে পিএটিআই সংক্রান্ত তথ্য দিয়ে জনসাধারণকে সহযোগিতা করার আহ্বান জানানো হয়েছে।
এদিকে সংশ্লিষ্ট পিএটিআইদের নিয়োগকারী মালিকপক্ষের বিরুদ্ধেও তদন্ত চলছে। তদন্ত শেষে ইমিগ্রেশন আইন ১৯৫৯/৬৩-এর ৫৫ই(১) ধারায় অবৈধ কর্মী নিয়োগ বা আশ্রয় দেওয়ার অভিযোগে তাদের বিরুদ্ধে মামলা করা হবে।

আপনার মূল্যবান মতামত দিন: