সাকিবের দেশে ফিরতে না পারার ব্যাখ্যায় যা বলছে বিসিবি
২০২৪ সালের মে মাসের পর দেশে ফেরেননি সাকিব আল হাসান। ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর সংসদ সদস্য পদ হারান তিনি। দেশে না থাকলেও একটি হত্যা মামলার এফআইআরে তার নাম আসে। এরপর তিনি পাকিস্তান ও ভারতে গিয়ে টেস্ট খেলেন। কানপুরে ভারতের বিপক্ষে দ্বিতীয় টেস্টই সর্বশেষ আন্তর্জাতিক ম্যাচ এই অলরাউন্ডারের।
এদিকে দেশে ফেরার জন্য বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) সবুজ সংকেত পেয়েছিলেন সাকিব। কিন্তু শেষ পর্যন্ত দেশে ফিরতে না পারায় বিসিবির পাশাপাশি সাবেক ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া এবং বর্তমান ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ নজরুলকে দায়ী করেন এই অলরাউন্ডার। সম্প্রতি দেশের একটি গণমাধ্যমকে দেয়া সাক্ষাৎকারে এসব কথা জানান ৩৮ বর্ষী সাকিব।
সাকিবের অভিযোগ, ক্রিকেট বোর্ডে সরকারের হস্তক্ষেপের কারণে তার দেশে ফেরা হয়নি। বিষয়টি নিয়মের বাইরে হওয়ায় বিসিবির নিষিদ্ধ হওয়া উচিত বলে মনে করেন সাবেক অধিনায়ক। সাকিবের সেসব অভিযোগের কোনো জবাব দিতে পারেননি বিসিবি পরিচালক ইফতেখার রহমান মিঠু। বরং বিষয়টি তৎকালীন বিসিবি সভাপতি ফারুক আহমেদের কোর্টে বল ঠেলে দিয়েছেন তিনি।
সাকিবের দেশে ফিরতে না পারা নিয়ে সংবাদমাধ্যমকে মিঠু বলেন, ‘এই বিষয়টা নিয়ে মন্তব্য করার মতো আমি কেউ না। এখন আমি বিপিএল নিয়ে কথা বলছি। এটা মূল্যবান প্রশ্ন। এটার জন্য সঠিক কাউকে প্রশ্ন করতে পারেন। এই ঘটনাটা বর্তমান সভাপতির সময় ঘটেনি। তাই বলে যে আমরা বলব বিসিবির এখানে কিছু না সেটা তো না। এই ঘটনায় রাজনৈতিক প্রভাব ছিল কিনা সেটা তখনকার বোর্ড সভাপতি (ফারুক আহমেদ) বলতে পারবেন। কারণ সভাপতি হিসেবে তখন উনিই সব যোগাযোগ করেছেন।’
এদিকে, সাবেক ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া বলেছিলেন, সাকিব যেন খেলতে না পারে সেটা নিয়ে তিনি বিসিবিতে আলাপ করবেন তিনি। বিষয়টি নিয়ে তৎকালীন বিসিবি সভাপতি ফারুক আহমেদের সঙ্গে তিনি কথা বলেছিলেন কি না, সেটি নিশ্চিত হন মিঠু। তবে বর্তমান বিসিবি সভাপতি আমিনুল ইসলাম বুলবুল এবং মিডিয়া কমিটির চেয়ারম্যান আমজাদ হোসেনের সঙ্গে কথা বলবেন তিনি।
এই প্রসঙ্গে বিসিবির পরিচালক বলেন, ‘আমার মনে হয় বিষয়টা নিয়ে আমাদের আলাপ করা উচিত। সাকিব দারুণ একজন ক্রিকেটার, বাংলাদেশের সম্পদ, বাংলাদেশ ক্রিকেটের সম্পদ। আজ পর্যন্ত ওর মতো ক্রিকেটার বাংলাদেশে আসেনি। যেহেতু আলাপটা উঠেছে, এটা নিয়ে আমি বিসিবি সভাপতির সঙ্গে আলাপ করব। কিন্তু সভাপতি এবং মিডিয়া কমিটির চেয়ারম্যান সিদ্ধান্ত নেবে কীভাবে বিষয়টা নিয়ে কথা বলবে।’
এর আগে, গত ২৯ ডিসেম্বর সাকিব বলেন, ‘আমাকে সরাসরি ক্রীড়া উপদেষ্টা ও আইন উপদেষ্টা গ্রিন সিগন্যাল দিয়েছিলেন। আমি প্লেনে উঠেছি। বিসিবি থেকে আমাকে পুরো নিশ্চিত করা হয়েছে। (যুক্তরাষ্ট্র থেকে) তারপর আমি প্লেনে উঠেছি। দুবাইয়ে নামার পর তাদের সব জায়গা থেকে আবার বলছে, না, তাদের নাকি ১২ ঘণ্টার মধ্যে পরিস্থিতির অনেক পরিবর্তন হয়ে গেছে। যদি না আসি, তাহলে ভালো হয়। আমি আর যাইনি।’
বিসিবিতে সরকারের হস্তক্ষেপ হওয়ায় রীতিমতো হতাশা প্রকাশ করেছেন সাকিব। তিনি বলেন, ‘কথা হচ্ছে ক্রিকেট বোর্ডের সঙ্গে সরকারের কোনো সম্পর্কই থাকার কথা নয়। আর ক্রিকেট বোর্ড যদি সরকারের ওপর চাপিয়ে দেয়, এর মানে, ক্রিকেট বোর্ডে সরকারের হস্তক্ষেপ আছে। এর অর্থ হলো, বিষয়টা আইসিসিতে যাওয়া উচিত। তাদের সঙ্গে সঙ্গে নিষিদ্ধ হয়ে যাওয়া উচিত (হাসি) ! আসলে ওই সাবজেক্টেই যাওয়া উচিত নয়। আমাকে যদি ক্রিকেট বোর্ড ফেরত না নিতে পারে (দেশে), এটা তাদের ব্যর্থতা। ঠিক না? আমার কী করার আছে এখানে?’
উল্লেখ্য, প্রথমবারের মতো আইএল টি-টোয়েন্টিতে খেলছেন সাকিব। আইপিএলের দল মুম্বাই ইন্ডিয়ান্সের ফ্র্যাঞ্চাইজি এমআই এমিরেটসের হয়ে খেলছেন টাইগার সাবেক বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার। তার দল এমআই এমিরেটস গতকাল প্রথম কোয়ালিফায়ারে ডেজার্ট ভাইপার্সের কাছে ৪৫ রানে হেরে গেছে। ফাইনালে ওঠার লড়াইয়ে দ্বিতীয় কোয়ালিফায়ারে খেলবে এলিমিনেটরে বিজয়ী দলের বিপক্ষে।

আপনার মূল্যবান মতামত দিন: